কি করবো ? কি করা উচিত ? পথ বলে দিন প্লিজ
২০০৫ থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাংবিধানিক কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করলেও এই সংগঠনকে চিনি আরো অন্তত ৬-৭ বছর আগে থেকে । পিকনিক-কুইজ প্রতিযোগীতা-রচনা প্রতিযোগিতা আর পত্রিকা স্টিকারের জাঁকজমকপূর্ণ জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে সেই থেকে একটু একটু করে কাছে টেনে নিয়েছে এই সংগঠন । আলসেমি আর ফাঁকিবাজ ধরনের বৈশিষ্টের কারনে পুরোপুরি মিলে যেতে সময় লেগেছে অনেক...
ইসলামী ছাত্রশিবির এবং জামায়াতে ইসলামী । জামায়াত ইসলামী নিয়ে মাথাব্যাথা কখনোই অনুভব করিনাই, তাদের কারো সাথে কখনোই কোন ধরনের কথা পর্যন্ত হয়েছে বলে মনে পড়েনা । আবেগের সবটুকু শিবিরকে নিয়েই । জেনে এসেছি শিবির জামায়াতের কোন অংগ সংগঠন না । তবে.. কিছুটা দেরীতে হলেও বুঝতে পেরেছি, একই আদর্শের ধারক উভয় সঙ্গঠন । একটি কাজ করে শুধুমাত্র ছাত্র-অংগনে অন্যটা সবকিছু নিয়ে...
অপরিমেয় নেগেটিভ প্রচারনা । অগনিত অভিযোগ ! অসংখ্য অন্যায়ের দায় কাঁধে চাপানো হচ্ছৈ প্রতিটা মুহুর্তে..তবুও জানপ্রাণ দিয়ে-অন্তরের সবটুকু ভালোবাসা নিয়ে আকড়ে ধরে আছি.. দাঁত কামরে ধরে আছি প্রিয় এই সঙ্গঠনকে ... এর কারন কি ? একেবারে অহেতুক ?
পৃথিবীর গাধাতম মানুষটার ও তো ন্যুনতম এটুকু জ্ঞান আছে যে এমন খারাপ সংগঠনের সাথে জড়িয়ে থাকার কোন মানে হয়না-সব জেনে শুনে... পাগল তো নই... অথবা আমি পাগল হলেও আরো লক্ষটা ছাত্রের সবাই তো মাথাখারাপ পাগল না...
আমার প্রথম ও প্রধানতম পরিচয়, আমি মুসলমান - আমি বিশ্বাসী - আমি বিশ্বাসী আল-কুরআনের প্রতিটা নির্দেশনায়.. আমি বিশ্বাসী মৃত্যু পরবর্তী জীবনের হিসেব-নিকেশে... আল কুরআনের নির্দেশনা ? কি সেটা ? খুব সহজসরল আর সাধারণ ভাষায় বলা যায় .."তোমাদের জন্য রাসুলের জীবনে রয়েছে সবচেয়ে উত্তম আদর্শ".. আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ সা: এর জীবনকে অনুসরন করা, তার কর্মপদ্ধতি অনুকরন করা ছাড়া আর কোন ধরনের-কোন অবস্থার জীবনব্যবস্থা অনুসরন করে মৃত্যুর পরের জীবনে পার পাওয়া যাবেনা.. কোন সন্দেহ নেই - সামান্যতম সন্দেহ নেই .. একজন বিশ্বাসী মুসলমানও এটায় সন্দেহ করতেও পারবে না...
আমাকে জানতে হয়েছে আল্লাহর রাসুলের জীবন, সেটা কিরকম !!! আমি যেমনটা জেনেছি..লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী মুসলমানও সেটা জানেন ! আল্লার রাসুল সা: নামাজ পড়া শেখানো আর রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে শেখানোর জন্য তার জীবন ব্যায় করেন নাই...
তিনি তার জীবন ব্যায় করেছেন, সব ধরনের প্রভুত্ব আর সব ধরনের জীবনব্যবস্থা ধ্বংস করে একমাত্র "লা শারীক আল্লাহ" র প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য । পৃথিবীর প্রতিটি কাজে থাকবে আল্লাহর কাছ থেকে সরাসরি প্রাপ্ত আল-কুরআনে বর্নিত নির্দেশনার সুনিবিড় অনুসরণ... এর কোন বিকল্প নেই...
আল্লাহর রজ্জুকে ধারন করা , সীসাঢালা প্রাচীরের মত করে সারিবদ্ধ থাকা , জামায়াতবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় করা..এগুলো সরাসরি কুরআনের নির্দেশ । কিভাবে এ নির্দেশ অমান্য করে আমি বা আমরা দলছাড়া মেষপালের একাকী মেষের মত বিচরণ করতে পারি ? সংগঠনবদ্ধ হওয়া ব্যতীত ইসলাম নামের কোন ধর্মেরই অস্তিত্ব থাকেনা..অনুসরনযোগ্য মানুষটি, যিনি আল্লাহর রাসুল..তিনি শিখিয়ে ও দেখিয়ে গেছেন...বিচ্ছিন্ন সব মানবসন্তানদেরকে সংঘব্ধ হয়ে থাকতেই হবে... এর-ও কোনই বিকল্প নেই...
এখন এলো সংগঠন বেছে নেবার পালা... কাকে বেছে নেবো ? খুবসহজ তিনটি অপশন চলে আসবে যেকোন বিচক্ষণ আর নিজের প্রতি শুভাকাংখী মানুষের মনে..
১. আমাকে যে বা যেই ইসলামী সংগঠনটি এসব শেখার ব্যবস্থা করে দিলো
২. তাকে ভালো না লাগলে অন্য কোন ইসলামী সংগঠন
৩. কাউকেই যুক্তি-জ্ঞান ও বিবেকের সাথে মিলাতে না পারলে নিজে একটি ইসলামী সংগঠন গড়ে তোলা...
লক্ষ্য করুন.. প্রতিটা ক্ষেত্রেই আপনাকে অবশ্য অবশ্যই ইসলামী সংগঠনভুক্ত হয়ে থাকতেই হবে..যদি আপনি সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাসী (মুমিন) মানুষ হন...
যাহোক.. ইসলামী ছাত্রশিবির নামের ছাত্রসংগঠনটি ব্রেনওয়াশ করেই ফেললো..অন্তর্ভুক্ত করে ফেললো তার সব কর্মপদ্ধতি আর আদর্শের সাথে...
কিন্তু এ যে শিবির !!!
খুব খারাপ !!
- শিবির রগ কাটে !
: জ্বী না... অন্তত একদশক সময় ধরে খুব আন্তরিকতা নিয়েই এই সংগঠনের প্রতিটি কাজের খবর রেখেছি.. একটা ঘটনাও এরকম ঘটেনাই.. উল্টোটা ঘটলো বেশ কয়েকবার.. শিবির কর্মীদের রগে আক্রমন চালানো হলো মিডিয়া কাভারেজের মধ্যেই !
-তারপর ? শিবির তো ভন্ড ! ইসলামের নামে রাজনীতি করে - ইসলামের অপব্যখ্যা দিয়ে কর্মী সংগ্রহ করে !
: কই ? আমি তো এরকম পেলাম না ! আমি তো আল্লাহর রাসুলের জীবনী পুংখানুপুংখ ভাবে জেনেছি.. আমি তো নিজে কুরআনের আয়াতগুলো পড়ে দেখেছি...সেখানে যেসব কথা বলা হয়েছে, তা থেকেই তো শিবিরকে তার কাজের পদ্ধতি ঠিক করতে দেখলাম পুরোটা সময় জুড়ে ! কুরআন আর রাসুলের জীবনী জানা এই আমি এবং আমার মত আরো লক্ষটা ছাত্রকে কি করে সম্ভব কুরআন বিরোধী কোন ব্যবস্থা মেনে নিতে !
- তবুও শিবির খারাপ ! শিবির মানেই খারাপ ! কোন কারনের দরকার নাই !
: তাই? না !! শিবিরের কর্মীদেরকে আমি সিগারেট খেতে দেখিনাই । উগ্র কথা বলতে শুনিনাই কোনদিন..কারো সাথে অহেতুক খারাপ আচরন করতে দেখিনাই একজনকেও...প্রত্যেককে নামাজী পেয়েছি...প্রত্যেককে সত্যবাদী-নি:স্বর্থ আর ভদ্র হিসেবে দেখেছি..তবুও খারাপ ? কোন কুল কিনারা খুজে পাইনা আমি.. এই পচে যাওয়া নষ্ট সমাজের মাঝে একটা বা দুইটা ভালো গুণের ছেলেরাই তো হীরার মত জ্বলজ্বল করে । সেখানে এতবেশি ভালো ভালো ছেলেগুলোর একত্রিত সংগঠন..সেটাকে খারাপ বলার কোন মানেই খুজে পাইনা !
- আচ্ছা ! ঠিক আছে, তোমরা ভালো..কিন্তু এটা আসলেই ভন্ডামী..তোমাদের আগের প্রজন্ম অন্য নাম নিয়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রচুর অন্যায় করেছে । হত্যা করেছে - খুন করেছে...
: যদিও বিশ্বাস করার মত বাস্তবতা কখনোই খুজে পাইনি, তবুও ধরে নিলাম এই অভিযোগ সত্য । "ইসলামী ছাত্রসংঘ" ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অবর্নণীয় অন্যায় করেছে ... কিন্তু ??? ভেবে দেখি আমি.. সেই সংঘের তো মৃত্যু ঘটিয়ে দেয়া হয়েছে !! সেই সংঘের নাম ও নাই..সেই সংঘের কোন "খুনি" "রাজাকার" কর্মীও এখন এই-আমার ছাত্র সংগঠনটির সাথে জড়িত নেই । এখানে আমার দায়টা ঠিক কোথায় ?
আমি তো সর্বান্তকরনে সব কিছুকে ভালোই পেলাম ! সব ভালো দেখেই নিজেকে বিলিয়ে দিলাম.. আমি তো মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রাপ্ত এই সার্বভৌম রাষ্ট্রটির কল্যানকামী (আমার অন্তরটাতো আমি সবচেয়ে ভালো জানি) ..আমি বললাম, এই যে ছাত্রশিবির, তুমি কি এটা স্বীকার করো ? ছাত্রশিবির বিশাল বিজয় র্যালি করলো, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পর্যন্ত স্কলারশীপের ব্যবস্থা করে দিয়ে আমার আকাংখাকে সম্মানিত করলো
তারপর ? সবকিছুতে ভালো আর কুরআন অনুসারী হবার পরে কনফিউশান ছিলো এই জায়গাটায়.. শিবির কি এদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি দায়বদ্ধ ? শিবির আবার স্বাধীনতা বিরোধি নাতো... আমার কনফিউশনের এই জায়গাটাও তো পরিস্কার হয়ে গেলো !!
তবুও ... ?
আমি নিজের বিবেকের কাছে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হবার পরেও আপনাদের কাছ থেকে জানতে আগ্রহী...
ক. আমি/আমরা ছাত্রশিবিরের সাথে থাকবো
খ. আমি/আমরা অন্য কোন ইসলামী (যারা রাসুলের পুরোপুরি অনুসরণ শেখাবে) সংগঠনের সাথে জড়িয়ে যাবো (কোন সে সংগঠন ? )
গ. আমি/আমরা নিজেরাই কোন একটা নতুন সংগঠন করে তুলবো যা হবে নবী মুহাম্মদ সা: এর পরিপূর্ণ অনুসরণকারী ..
বলুন দয়া করে.. এর বাইরে আমাদের অন্য কোন পথ কি খোলা আছে ? যদি আসলেই থাকে, আমরা জানিনা.. দয়া করে সে পথের যৌক্তিকতা বুঝিয়ে দিন.. একটু সময় .. অল্প একটু সময় চাই আপনার কাছে...
কি করবো ? কি করলে সবাইকে তুষ্ট করা সম্ভব ? সংঘ ছেড়ে দিয়ে শিবির তো হলাম.. এরপর যদি বলেন শিবিরের ও মৃত্যু ঘটাতে হবে.. তারপর ? মুমিন জীবনের বাস্তবতার কারনে আরেকটা নতুন সংগঠন তো গড়ে তুলতেই হবে ! সে নতুনকে কি রেহাই দেয়া হবে অভিযোগ থেকে ?
নিম্চয়ই হবেনা..
আছে কোন উপায় ? এই পৃথিবীতে সুন্দর-সুখী-সুশৃংখল আর শান্তির সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা আর পরবর্তী জীবনে আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের... ?
লেখাটি বার পড়া হয়েছে..Share