ইসলামী শিক্ষা দিবসের কিছুটা ইতিহাস
১৫ আগষ্ট-১৯৬৯ এর এক ইতিহাস - যা জানার কৌতুহল অনেকের ই রয়েছে ।
শহীদ আব্দুল মালেক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগের সেরা ছাত্র ইসলামী ছাত্রশিবির এই দিনটিকে ইসলামী শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করে ।
অসাধারণ মেধাবী আব্দুল মালেকের আলোকোজ্জল শিক্ষাজীবন ছিলো এরকম,
-তিনি জুনিয়র স্কলারশীপ লাভ করেন।
-এসএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ডে মেধা তালিকায় একাদশ স্খান অর্জন করেন।-এইচএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৪র্থ স্খান নিয়ে পাস করেন।
-এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন।
-শাহাদাত বরণ কালে তিনি ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
-তিনি ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে ১২২ নং রুমে থাকতেন।
১৫ আগষ্ট। ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রসেনানী আব্দুল মালেকের ৩৯তম শাহাদাত বার্ষিকী। ইসলামী শিক্ষার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী ও সমাজতন্ত্রীদের হাতে গুরুতর আহত হওয়ার ৩ দিন পর ১৯৬৯ সালের এই দিনে তিনি শহীদী মৃত্যুর অমিয়সুধা পান করেন।
পাকিস্তান আমলে সর্বশেষ শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয় ১৯৬৯ সালে । এতে শিক্ষা ব্যবস্থার আদর্শিক ভিত্তি কি হবে, তা নিয়ে জনমত জরিপের আয়োজন করা হয় । এর অংশ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে ১৯৬৯ সালের ২ আগষ্ট এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় । এই সময়ে বামপন্থী ও ইসলামবিরোধী সংগঠনসমূহ এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে ।
এই আলোচনা সভায় বামপন্থীদের বিরোধীতামুলক বক্তব্যের মধ্যে শহীদ আব্দুল মালেক মাত্র ৫ মিনিট বক্তব্য রাখার সুযোগ পান । অসাধারন মেধাবী বাগ্মী আব্দুল মালেকের সেই ৫ মিনিটের যৌক্তিক বক্তব্যে সভার মোটিভ পুরোপুরি পরিবর্তিত হয়ে যায় । উপস্থিত শ্রোতারা আব্দুল মালেকের বক্তব্যের সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করে । আব্দুল মালেকের ত্বত্ত্ব ও যুক্তিপূর্ণ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ক্ষিপ্ত করে দেয় ইতোপূর্বে বক্তব্য রাখা ইসলাম বিরোধী বক্তাদের ।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ইসলামী শিক্ষার পক্ষের জনমতকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে টি.এস.সি. তে ১২ আগষ্ট আয়োজন করা হয় আরেকটি আলোচনা সভার । বামপন্থী শিক্ষকরা এখানে শহীদ আব্দুল মালেক ও তার সংগীদের আসতে বাধার সৃষ্টি করে । কিন্তু যেভাবেই হোক আব্দুল মালেক সভায় উপস্থিত হন । ডাকসুর সভায় সাধারন ছাত্রের কথা বলার অধিকার আছে । শহীদ আব্দুল মালেকসহ কয়েকজন ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে কথা বলার আবেদন করলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয় ।
একচেটিয়া বক্তব্যমঞ্চ দখল করে ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা বক্তব্যের ভাষা ধীরে ধীরে ইসলামকে আক্রমণ করে দেয়া শুরু করে । এসময় মস্কোপন্থী এক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ইসলাম সম্পর্কে চরম আপত্তিকর বক্তব্য রাখতে শুরু করলে অনুষ্ঠানের উপস্থিত ইসলামপ্রেমী ছাত্ররা প্রতিবাদ জানায় । যুক্তি ও বান্তবতার লড়াইয়ে পরাজিত বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠী ক্ষিপ্ত হয়ে আক্রমন চালায় ছাত্রদের ওপর ।
সকল সংগীকে নিরাপদে বিদায় দিয়ে শহীদ আব্দুল মালেক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশ দিয়ে যাবার পথে লোহার রড-হকিষ্টিক নিয়ে তার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে পিশাচ বাহিনী ধর্মনিরপেক্ষ ও বাম সন্ত্রাসীরা । রক্তাক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ছাত্র আব্দুল মালেক । তিনদিন পর ১৫ আগষ্টে শাহাদাত বরন করেন ইসলামের এই মহান বক্তা ।
আব্দুল মালেকের জন্ম ১৯৪৭ সালের মে মাসে। জন্ম স্খান বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার খোকসাবাড়ী গ্রামে।
শহীদ আব্দুল মালেকের মধ্যে বিস্ময়করভাবে অনুকরণীয় সব গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। তিনি ছিলেন প্রখর মেধাবী, নিরহংকার, বিনয়ী, মিষ্টভাষী, সঠিক নেতৃত্ব দানের দূর্লভ যোগ্যতার অধিকারী, ভালোবাসা, ত্যাগ ও কুরবানীর উজ্জ্বল ও অনুপম দৃষ্টান্ত।
ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে প্রথম শহীদ , শহীদ আব্দুল মালেক ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীর মনে চিরদিন ভাস্বর হয়ে থাকবেন প্রেরনার এক সুউজ্জ্বল বাতিঘর হয়ে ।
লেখাটি বার পড়া হয়েছে..